Sir Azizul Haque



বাংলার কৃতী সন্তান স্যার . এম আজিজুল হক
স্যার . আজিজুল হক ১৮৯২ সালের ২৭ নভেম্বর নদীয়া জেলার শান্তিপুর গ্রামের এক সাধারণ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মুন্সি মনিরুদ্দীন আহমদ। পিতামহ নাসিমউদ্দিন আহমদ। তিনি পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। শৈশবে মাকে হারিয়েছেন পিতৃব্য কবি মোজাম্মেল হকের তত্ত্বাবধানে অভিভাবকত্বে এক নিঃসন্তান চাচীর স্নেহছায়ায় তাঁর শৈশব কেটেছে।
শিক্ষা জীবনঃ শান্তিপুরে পিতামহের প্রতিষ্ঠিত পারিবারিক বিদ্যালয়ে আরবি বাংলা শেখার মাধ্যমে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু হয়। শান্তিপুর হাই মুসলিম ইংরেজী স্কুলে তিনি পড়েছিলেন এবং ১৯০৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে এফ.. বি. অধ্যয়ন করেন। ১৯০৯ সালে এফ. ১৯১১ সালে ডিস্টিংশনসহ বি.. পাস করেন। কলকাতা ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে ১৯১৪ সালে বি.এল. ডিগ্রী লাভ করেন।
বৈবাহিক জীবনঃ আজিজুল হক ১৯১৫ সালের মে মাসে হুগলী জেলার শিমলাগড়ের জমিদার মোহাম্মদ আবু সাঈদের কন্যা কানিজ খাতুনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আজিজুল হক-কানিজ খাতুনের পাঁচ পুত্র পাঁচ কন্যা তার মধ্যে দুই ছেলে এবং পাঁচ মেয়ে বর্তমানে জীবিত রয়েছেন।
কর্মজীবনঃ ১৯১৫-তে কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে ওকালতি শুরুর মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। বেটনা ইউনিয়ন বোর্ডেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত। ১৯২৬- নদীয়া জেলার সরকারী উকিল (জিপি) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) পদ লাভ করেন। একই বছর বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত। ১৯২৬-১৯৩৪ পর্যন্ত নদীয়া জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান। ১৯২৯- ব্যবস্থাপক সভায় পূণঃনির্বাচিত। এই নির্বাচনে .কে. ফজলুল হক তাঁকে সমর্থন করেন। ১৯৩৩ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় কৃষ্ণনগর মিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত। ১৯৩৪ এর ১৫ জুন বঙ্গীয় সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত। ১৯৩৭ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত। একই বছর লীগ কোয়ালিশন দলের সদস্যদের ভোটে ব্যবস্থাপক সভার স্পীকার নির্বাচিত। ১৯৪২ পর্যন্ত পদে দায়িত্ব পালন। ১৯৩৮ এর আগস্ট মাসে দুই বছরের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত। ১৯৪০ এই পদে পুনঃনিযুক্তি লাভ এবং ১৯৪২ এর মার্চ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন।১৯৪২ এর এপ্রিলে বিলাতে ভারতের হাইকমিশনার পদে নিযুক্তি পেয়ে লন্ডন গমন। এক বছর রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করে ১৯৪৩ এর এপ্রিলে দেশে প্রত্যাবর্তন। একই বছর মে ১৯৪৩ ভারতের বড় লাটের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত। এই পদে বানিজ্য,শিল্প, বেসামরিক সরবরাহ খাদ্য বিভাগের কেবিনেট মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি ভাইসরয় লর্ড লিনলিখগো লর্ড ওয়াভেলের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৫ কেন্দ্রের মন্ত্রিতব থেকে পদত্যাগ। কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগদান। ১৯৪৬ মুসলিম লীগের টিকিটে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য গণ পরিষদেও সদস্য নির্বাচিত হন।

স্যার আজিজুল হক অবিভক্ত বঙ্গেও একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রাজনীতিবিদ,কুটনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ লেখক হিসেবে প্রভহত খ্যাতি লাভ করেন। সরকারী স্কুলে শিক্ষার মাধ্যমে ইংরেজী  থেকে বাংলায় চালু, প্রাথমিক শিক্ষা পরিকল্পনাকে অ্যাক্টে পরিণত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠা (১৯৪০). শিক্ষা সপ্তাহ পালন কর্মসূচী প্রবর্তন, বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার মহাজনী বিল প্রজাস্বত্ব আইন উপস্থাপন তাঁর উলেস্নখযোগ্য কীর্তি। সম্মানঃ ১৯২৬ সালে আজিজুল হক খান বাহাদুর, ১৯৩৭ সালে সি.., ১৯৩৯ সালে নাইট উপাধি পান। তিনি ইউত, টি.সি.- অনারারি লেফটেন্যান্ট কর্ণেল ছিলেন। ১৯৩৯ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৪০ রবীন্দ্রনাথের আহবানে শ্রী নিকেতনের বার্ষিক উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বগুড়ায় তাঁর নামে ১৯৩৯ সালের জুলাই আজিজুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ তিনি কে.সি.এস.আই উপাধি পান। ১৯৪২ তাঁকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডি.লিট. উপাধিতে সম্মানিত করেন।
১৯৪৬ সালে ১৬ আগষ্ট মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের আহবানে তিনি বৃটিশ সরকার প্রদত্ত সব খেতাব বর্জন করেন।                  
প্রকাশিত গ্রন্থঃ History and problems of Moslem Education in Bengal (1917), Education & Retrenchment (1924), The Man Behind the Plough(1939), The Sword of the Crescent Moon(1984), Cultural Contributions of Islam to Indian History: A Plea for Separate Electorate in Bengal (1931), The Man Behind the Plough(1939) প্রভৃতি। শেষোক্ত বইটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি.. ক্লাসের পাঠ্য ছিল। হযরত মোহাম্মদ(দঃ) জীবন চরিত্র বইটি তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ
স্যার . আজিজুল হক কলকাতায় ১৯৪৭ সালের ১৯ মার্চ তারিখে মসিত্মক রক্তক্ষরণ জনিত কারনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন